Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
গল্প নয় সত্যি
ছবি
ডাউনলোড

মতিউর রহমান ::
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অবরুদ্ধ সুনামগঞ্জবাসীর কিছু কথা Ñ
১৯৭১ সালের ১০ই মে সোমবার আনুমানিক সকাল ৯টার সময় সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ বাস লাইন দিয়ে পায়ে হেঁটে পাক-আর্মিরা তিনভাগে ভাগ হয়ে সুনামগঞ্জ শহরে আসে। শহর খালি, প্রাণ ভয়ে শহরের মানুষ পালিয়েছে। পাকসেনারা তাদের সহযোগীদের নিয়ে সুনামগঞ্জ বাজার লুট করা শুরু করে। লুটের মালের লোভে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকা কিছু লোভী মানুষরাও এই লুটে অংশগ্রহণ করে। পাকসেনারা কাউকে সামনে পেলেই ধমকের সুরে বলে, “কলেমা বাতাও”। প্রাণের ভয়ে যারা কলেমা জানতো না তারাও শিখে ফেলে।
সিলেট জামায়েতের এক নেতা সেখানে ইমামতি করতেন। সাংগঠনিক কাজে তিনি সুনামগঞ্জে আসেন। পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ও মুখে লম্বা দাঁড়ি। আলফাত উদ্দিন স্কয়ার (ট্রাফিক পয়েন্ট) হতে একটু দূরে বর্তমান চেম্বার ভবনের পাশে ছিল শান্তি কমিটির অফিস। সেখান হতে কাজ সেরে জামায়াত নেতা সবেমাত্র বেরিয়েছেন। তখন দুই পাকসেনা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। দালাল নেতা তাদের সালাম দেয়নি, তাকে দেখে পাকসেনারা বলে “তুম মুসলমান হে”, সালম কিউ নেহি দেয়া? তখন তারা ধমকের সুরে বলেÑ “কলেমা বাতাও।” দালাল নেতা দরুদশরীফ সহ প্রাণের ভয়ে সহীহ আরবিতে কলেমা বলেন। তার দরুদসহ কলেমা শুনে, বলে “ইয়ে সহীহ নেহি হুয়া”। ইমাম সাহেবের কলেমা ভুল… তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হতো পাঠকরাই চিন্তা করুন।
তাকে দুই থাপ্পর দিয়ে দাঁড়ি-টুপির খাতিরে ছেড়ে দিয়ে বলে, “সহীহ করকে কলেমা ছিখো”। দালাল সাহেব ভবিষ্যতে সহীহ শিখবেন বলে সে যাত্রায় রক্ষা পান।
সুনামগঞ্জ বাজারের কাপড়ের বড় ব্যবসায়ী মতছিন আলী, আব্দুল বারী সাহেব, বাবু শ্রীশ রায় প্রমুখ তৎকালীন সময়ে লাখ টাকার কাপড় রেখে ভারতে চলে গেলে তাদের দোকান লুটপাট হয়। তাদের ফেলে যাওয়া দোকানে কিছু সংখ্যক দালাল কাপড়ের দোকান খুলে। একদিন এক পাকসেনা পঞ্চাশ টাকার কাপড় কিনে ১ টাকার একটি ময়লা নোট দিয়ে বলে, “ইয়ে লাও কাপড়া কা দাম।” পঞ্চাশ টাকার মধ্যে এক টাকা, তাও ময়লা নোট। দোকানদার মনে মনে রেগে আগুন, কিন্তু রাগ দেখালে আমও যাবে জানও যাবে। মনের দুঃখ মনে রেখে মুখে কাষ্ট হাসি ফুটিয়ে বিনয়ের সুরে বললো টাকা লাগবে না খান সাহেব। সৈনিকটি একথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, “বাঙ্গাল জাত বড়া দিলওয়ালা জাত হেয়।” সেই টাকার ময়লা নোটটি ফেরত নিয়ে চলে গেল।
কখনে কখনো এসমস্ত কুলাঙ্গারের দল প্রকাশ্য রাস্তায় পুরুষদের লিঙ্গ দেখে শনাক্ত করতো মুসলমান না হিন্দু। আগের একটি লেখায় জনৈক সৈনিকের পায়খানার গাড়ি বিক্রির কথা বলেছিলাম।
ভারতে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন বাড়িঘর ফেলে, পাকসেনা ও রাজাকাররা মিলে ঘরের টিন খুলে নতুন ব্যবসা শুরু করে। কোনো কোনো সুযোগ-সন্ধানীর বাড়িতে নতুন টিনের ঘর উঠতে শুরু করে। কোনো কোনো ব্যক্তি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। অন্যদিকে বখাটে গুন্ডা প্রকৃতির কিছু যুবক রাজাকারে নাম লিখিয়ে রাইফেল কাঁধে নিয়ে এমন ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করে যে, ভদ্রলোক হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ তাদের রীতিমত সমীহ করে চলতে হতো। কোনো কোনো রাজাকারের দাপটে মান-সম্মান বিপন্ন হয়ে ওঠে। রাস্তাঘাটে মা-বোনদের চলা ফেরা করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। বিকেল থেকে যখন কারফিউ শুরু হতো তখন যাদের ঘরে যুবক ছেলে ও যুবতী মেয়ে ছিল তাদের মায়েদের উৎকণ্ঠা শুরু হতো। এই বুঝি ছেলেকে মুক্তিবাহিনী বলে টাকা আদায়ের জন্য ধরে নিয়ে যায় নয়তো মিলিশিয়া সৈন্যদের সাথে নিয়ে যুবতী কন্যাকে ধরে নিয়ে যায় কিংবা বেইজ্জতি করে। এ রকম কতো কাহিনী অবরুদ্ধ সুনামগঞ্জবাসীর কাছে শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই।
পাঠক বন্ধুরা লেখা বড় হয়ে যায় বলে অনেক হৃদয়বিদায়ক কাহিনী তুলে ধরতে পারলাম না। ভবিষ্যতে তুলে ধরার আশা রাখি।